গণতান্ত্রিকপন্থায় সমাজতন্ত্রে উত্তরণের কথা বলেছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (জন্ম ০১ নভেম্বর ১৯৪৩)

বাংলাদেশে তিনজন প্রখ্যাত আবু সাঈদ (উচ্চারণ অনুযায়ী) রয়েছেন। একজন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ; বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সুবক্তা, মিডিয়াব্যক্তিত্ব। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু সাইয়ীদ। অন্যজন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ; রাজনীতিবিদ। প্রথম জীবনে তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ‘ফুল টাইম রাজনীতিবিদ’ বনে যাওয়ায় আর শিক্ষকতায় ফেরেননি। মজার ব্যাপার হলো, দুই অধ্যাপকই ছিলেন বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ অবসরে গেছেন ঢাকা কলেজ থেকে আর অধ্যাপক আবু সাইয়িদ পড়াতেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুজনের বয়সও কাছাকাছি। শিক্ষাবিদ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্ম ১৯৩৯ সালে। আর রাজনীতিবিদ আবু সাইয়িদের জন্ম ১৯৪৩ সালে।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ মিল্কভিটার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং সার্ক-এর তথ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আরও বিভিন্ন দায়িত্বে অভিজ্ঞতাঋদ্ধ আবু সাইয়িদ একসময় আওয়ামী লীগ ও বাকশালের রাজনীতি করলেও তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল বর্তমান বাংলাদেশে অনুপস্থিত। তাই কোনো দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও আদর্শিক রাজনীতিতে তিনি তৎপর।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

দখিনে ইছামতি। পুবে বহতা বড়াল। মিলে মিশে হুরসাগর ও যমুনার বিপুল জলরাশি। পশ্চিমে সুতাখাল। মাঝখানে ছোট দ্বীপের মত গ্রাম সালিখাপাড়া। পাবনার বেড়া উপজেলার এই শান্ত স্নিগ্ধ গ্রামে ১৯৪৩ সালের পয়লা নভেম্বর জন্ম আবু সাইয়িদের। জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে প্রকাশিত জীবনবৃত্তান্তে জন্মসাল ১৯৪৫ উল্লেখ করা হলেও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ নিজে বলেছেন তাঁর জন্ম ১৯৪৩ সালে।

আবু সাইয়িদের বাবা শিক্ষাব্রতী নজির উদ্দিন সরকার ব্রিটিশ যুগের এন্ট্রাস পাশ। মাঝে মধ্যে পাবনা জেলা আদালতের জুরি-জজ। শেক্সপিয়ারের নাটকেও অভিনয় করতেন। মা সাইদাতুন্নেসা বিয়ের পর স্বামীর কাছে শেখেন ইংরেজি বর্ণমালা। তাঁর ইচ্ছায় বাড়িতেই গড়ে উঠেছিল মেয়েদের মক্তব। আরবি, অংক, বাংলার সঙ্গে সাইদাতুন্নেসা ইংরেজি বর্ণমালা শিখাতেন।

শিক্ষা, রাজনীতি ও কর্মজীবন

আবু সাইয়িদ পাবনার বেড়া বিপিন বিহারী হাই স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পরে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকে আই.এ পাশ করেন ১৯৬২ সালে। ওই বছর তিনি এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

আবু সাইয়িদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আইয়ুববিরোধী রাজনীতির কারণে গ্রেপ্তার হন। এ সময় বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মাযহারুল ইসলামের পরামর্শে তিনি বাংলায় ভর্তি হন। অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। মাস্টার্সে পড়া অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের (রাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন।

আবু সাইয়িদ জানান, তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খানের কাছে। তাঁর ভাষায়: সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই বলেন যে, বাংলাদেশ স্বাধীন করতে হবে। মূলত তখন থেকেই তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হন। এরপর ছেষট্টি সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করলে আবু সাইয়িদ ছয় দফার পক্ষে একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি চোঙা (মাইক) দিয়ে ছয় দফার পক্ষে বক্তৃতা করতেন। মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনতো।

১৯৬৭ সালে এম. এ পড়া অবস্থায় একটি মামলায় ওয়ারেন্ট হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে আসে। এই খবর পেয়ে গ্রামের মানুষেরা জড়ো হন। আবু সাইয়িদকে নিয়ে পুলিশ যে নৌকায় উঠেছিল, গ্রামের উত্তেজিত মানুষেরাও সেই নৌকায় উঠলে মানুষের ভারে নৌকাটি ইছামতি নদীর ঘাটে ডুবে যায়। এ অবস্থায় পুলিশ বেশ বিব্রত হয়। কিন্তু আবু সাইয়িদ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে থানায় যান। পুলিশ তাঁকে একটি বন্ড দিতে বললে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। কেননা তাঁর ভাষায়: আমি দেশের জন্য আন্দোলন করছি। শিক্ষার জন্য কথা বলছি। কোনো অন্যায় করিনি। অতএব বন্ড দেব না। এ অবস্থায় তার চাচা পুলিশকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠির সুবাদে তাকে পুলিশ ছেড়ে দেয়।

১৯৬৭ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু তখনও ছাত্রদের সঙ্গে শাহমখদুম হলে আবাসিক শিক্ষক হিসেবে থাকতেন ও আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানেও অংশ নেন। ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষকদের অংশগ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সঙ্গে মিছিল নিয়ে রাজপথে গেলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর গুলিতে শামসুজ্জোহা শহীদ হন।

বঙ্গবন্ধু নির্দেশে শিক্ষকতা ছেড়ে ফুলটাইম পলিটিশিয়ান

১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মাযহারুল ইসলামের প্রভোস্ট ভবনে আগমন করেন। এর আগে তিনি শহীদ ড. জোহার কবর জিয়ারত করেন। ড. মাযহারুল ইসলাম আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। ঘরোয়া পরিবেশে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ছয় দফা না মানলে এক দফায় চলে যেতে হবে।’ আলোচনা চলাকালে বঙ্গবন্ধু হঠাৎ চোখ ফিরিয়ে আবু সাইয়িদকে বলেন, ‘তুমি এখানে কী করছো?’ শিক্ষকতা করার কথা বলায় বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, ‘এলাকায় যাও। কাজ করো। মাস্টারি করতে হবে না। রাজনীতিতে আসতে হবে।’ ড. মাযহারুল ইসলাম বললেন, ‘ও তো থিসিস করছে। প্রস্তুতিও নিয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু সরাসরি বললেন, ‘দেশ বাঁচলে সবকিছু করতে পারবে। পাবনায় আমার লোক কম। সেখানে ‘‘লাল টুপি’’তে ছেয়ে আছে। তোমাকে রাজনীতিতে আসতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু তাঁকে ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করেন। ওই নির্বাচনে আবু সাইয়িদ পাবনা-৫ (জাতীয় পরিষদ ২৮) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮৭.৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

১৯৭১ সালের নভেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের একটি ক্যাম্পে আবু সাইয়িদ (পেছনে দাঁড়ানো বাম থেকে পঞ্চম)

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাত নম্বর সেক্টরে উপদেষ্টা ও ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন। মুজিব নগর সরকারের দাায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ক্যাম্পটিকে ‘দি বেস্ট ক্যাম্প’ বলে উল্লেখ করেছেন। ক্যাম্পে প্রায় তিন হাজার যুবকের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ ও ইনডাকশন করা হতো।

গণপরিষদে আবু সাইয়িদ

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নতুন রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু যে ৩৪ জনকে বাছাই করেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন আইনের ছাত্র, আইনজ্ঞ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। হাতেগোণা যে কয়জনের পড়াশোনার বিষয় ছিল অন্য, আবু সাইয়িদ তাঁদের অন্যতম। তিনি পড়াশোনা করেছেন বাংলা সাহিত্যে। ফলে তাঁকে এই কমিটির সদস্য করার সংবাদে তিনি বিস্মিত হন।

তিনি বলেন, ‘কমিটিতে একজন কনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে হঠাৎ করে আমার নাম আসায় আমি উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলাম। এক ফাঁকে বঙ্গবন্ধুকে বললাম, আমি সাহিত্যের ছাত্র, খসড়া সংবিধান প্রণয়নের মতো এত বড় দায়িত্ব পালন করা আমার পক্ষে কষ্টকর হবে। বঙ্গবন্ধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কয়েক মুহূর্ত। বললেন, যাও, তুমি পারবে।’

সুপ্রিম কোর্টের সম্মাননা গ্রহণ

আবু সাইয়িদ বলেন, ‘কয়েক দিন পর দেখি সংসদ সচিবালয় থেকে আমার বরাবর ৫/৬টি দেশের সংবিধানের কপি পাঠানো হয়েছে। সেগুলো বিস্তারিত পড়ি। তুলনামূলক পাঠ তৈরি করি। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করি। সংবিধান প্রণয়নের মূল ব্যক্তি ছিলেন তিনি। কিছু পরামর্শ দিলেন তিনিও। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে সংসদ সদস্যদের পদ বাতিল-সম্পর্কিত ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলি, অন্য দেশের সংবিধানে এমনটি নেই। পরে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমরা কয়েকজন আলোচনা করি। বঙ্গবন্ধু বললেন, এ দেশের মানুষকে আমি জানি। অনেকেই লোভে পড়ে ব্যক্তি স্বার্থে এদিক-ওদিক করে। সুষ্ঠুভাবে দেশ চালাতে গেলে গণতন্ত্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সরকার দরকার।

আবু সাইয়িদ জানান, গণপরিষদের উত্থাপিত খসড়া সংবিধানে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বিশেষ করে এই দুটি মূলনীতি একসাথে কীভাবে চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ বিষয়ে সংসদ উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরেই আমি গণপরিষদে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিই এবং সেখানে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘গণতন্ত্র’ বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরি।

গণতান্ত্রিকপন্থায় সমাজতন্ত্রে উত্তরণ

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে

১৯৭২ সালের ২০ অক্টোবর গণপরিষদে উত্থাপিত খসড়া সংবিধানের ওপর অধ্যাপক আবু সাইয়িদ যে ভাষণ দেন, সেখানে তিনি বলেন: ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অক্ষুন্ন রেখে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যে সমস্যা, কী করে সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে, সেজন্য আমাদের সামনে এক দুরূহ সমস্যা ছিল বলে আমরা মনে করছি। কিন্তু সে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথে যেমন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে; ‘‘রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণ মুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’’ অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বহাল রেখে সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণের পথে যে নীতিগত দুরূহ বাধা ছিল, তা অপসারিত হয়েছে।’

পরিষদের উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের বক্তব্য ঊধ্বৃত করে আবু সাইয়িদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত মালিকানা রেখেও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে কোনো অন্তরায় নেই। সংসদ উপনেতার ভাষণের সঙ্গে আমি আরও দুটি দেশের কথা বলতে চাই। একটি হলো চেকস্লোভাকিয়া আর অন্যটি হচ্ছে G.D.R ( German Democratic Republic) দুটি দেশেই, যেমন ধরুন পূর্ব জার্মানিতে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেইজন্যে বলতে চাই, এই দুটি সমাজতান্ত্রিক দেশে ব্যক্তিগত মালিকানা রেখেও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। কাজেই যারা বলতে চান যে, ব্যক্তিগতমালিকানা রেখে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উত্তরণ সম্ভব নয়, তাদেরকে আমি বলতে চাই, ব্যক্তিগত মালিকানা রেখে সুষমসম্পদ বন্টনের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উত্তরণ সম্ভব। আমাদের উত্থাপিত সংবিধান তারই পথ ও পন্থা নির্দেশ করেছে।’

সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তিশালী ও মজবুত প্রশাসনিক কাঠামোর দরকার উল্লেখ করে আবু সাইয়িদ বলেন, ‘যে কাঠামো আজ কাজ করছে তা কলোনী যুগের। সেটা হল আমাদের শাসন ও শোষণ করার জন্য। সেটা জনসাধারণের মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না। জনগণের মঙ্গলের জন্য আইন যখন আমরা করতে যাচ্ছি, তখন আমাদের প্রত্যেকটি বিষয় চিন্তা করতে হবে। আজ বাংলাদেশে স্বাধীন। দেশের মানুষকে সুখী করার জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কল্যাণকর ব্যবস্থার প্রয়োজনে নিশ্চয়ই প্রশাসন-কাঠামোকে গ্রাম থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন আছে এবং সমাজ ও দেশের চাহিদার প্রেক্ষিতে সেই কাঠামোর রদবদল অবশ্যম্ভাবী।’

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে

ওই ভাষণে তিনি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দেশের যে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ইংরেজ আমল থেকে উদ্ভূত এবং যা এ দেশকে কলোনি করে রাখার উদ্দেশ্যে তদানীন্তন বৃটিশ শাসকদের মস্তিষ্ক-উদ্ভবিত, সে সম্পর্কেও আপনি জানেন। আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। পরিবর্তিত অবস্থায় আমাদের শিক্ষানীতির একটি মৌলিক রূপায়ণের প্রয়োজন আছে। সেই মৌল রূপায়ণ এই পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা এবং দক্ষ নাগরিক সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেছে।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘আমার বক্তৃতার শেষে বঙ্গবন্ধু টেবিলে হাত দিয়ে চাপড়ালেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম লবিতে আমাকে সহাস্য বদনে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন। এ স্মৃতিগুলো ভোলার নয়।

বাহাত্তর পরবর্তী জীবন: মিল্কভিটার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান

১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন পাবনা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবু সাইয়িদ। এই আসনে মোট ভোটার ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৪৯ জন। আবু সাইয়িদ পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৫৬৬ ভোট।

১৯৭৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লন্ডনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ১৯তম ইন্টার পার্লামেন্টারি কনফারেন্স অধিবেশনে বাংলাদেশ থেকে যে তিন সদস্যের প্রতিনিধি যোগ দেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ছিলেন তাদের অন্যতম। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমেদ ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তারা হাউজ অব কমন্সে গিয়ে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ডগলাস হিউমের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ইতিবাচক ভূমিকা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষা ও তাঁর মুক্তির উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

ঢাকায় মিল্কভিটার দুগ্ধ কারখানা উদ্বোধন, ১৯৭৪

সমবায় খাতকে বঙ্গবন্ধু গুরুত্ব দিতেন। ১৯৬৯ সালের শুরুতে বঙ্গবন্ধু এবং অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বগুড়ায় একটি জনসভায় যাওয়ার সময় বড়াল নদীর পাশে বাঘাবাড়ীতে অনেক গরুর খামার দেখেন। বঙ্গবন্ধু তখন আবু সাইয়িদকে বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন করে এখানে ডেইরি ফ্যাক্টরি করবো।’ ১৯৭৪ সালে সেই কথা মনে করে বঙ্গবন্ধু তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, পাবনায় একটা গরুর বাথান ছিল না? আবু সাইয়িদ বলেন, বাঘাবাড়িতে দেখেছিলেন আপনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওখানে একটা ডেইরি ইন্ডাস্ট্রি করতে হবে।’ মিল্কভিটা ব্র্যান্ড নামে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠন করা হলো। অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে মিল্কভিটার চেয়ারম্যান করা হলো। বাঘাবাড়ি, মিরপুর, মাানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও টেকেরহাটে দুগ্ধ কারখানা স্থাপিত হলো সমবায়ের ভিত্তিতে। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় সমবায় ছিল দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে আবু সাইয়িদ পাবনা জেলার গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি বাকশালের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আগস্ট ট্র্যাজেডির প্রতিবাদ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এ সময় সারা দেশেই আতঙ্কজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতাই কারাগারে। অনেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

খন্দকার মোশতাক জাতির পিতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেন এবং সারা দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। বিকেলে খুনী-সেনাকর্মকর্তা পরিবেষ্টিত বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উপরাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করেন।

মোশতাক তার ক্ষমতা দখলকে জাতীয় সংসদ কর্তৃক বৈধতাদানের অভিপ্রায়ে অধিবেশন আহ্বানের পরিকল্পনা করেন। প্রয়োজনবোধে তাদের হাত করার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ বঙ্গভবনে সাংসদদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু নগণ্য সংখ্যক সাংসদ উপস্থিত হওয়ায় সভার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। ১৬ অক্টোবরে বঙ্গভবনে পুনরায় সভা আহ্বান করা হয়।

আবু সাইয়িদ বলেন, ‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রচার করা হয় খুনী খন্দকার মোশতাকের সভায় যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। স্থান ঠিক করা হয়। তেজগাঁও এমপি হোস্টেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে। বেশির ভাগ এমপি এখানেই থাকেন। এরই মধ্যে আমরা ময়েজ উদ্দীন ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি জনাব তাজউদ্দীন সাহেব জেল থেকে বার্তা পাঠিয়েছেন, কোনোভাবেই যেন বঙ্গভবনে ১৬ অক্টোবর আহুত সভা সফল না হয়।’

তিনি লিখেছেন, ‘বঙ্গভবনে খুনী মোশতাকের সভায় যোগদানের ব্যাপারে আমরা জোর আপত্তি করি এবং আমাদের দৃঢ়চিত্ত কঠোর মনোভাবের জন্য এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যাদের যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তারাও চুপ হয়ে যান। সিরাজুল হক সাহেব (সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য) আমাদের কথা দেন, তিনি ছোট একটি প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখবেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিষয়টি উপস্থাপন করবেন।

আবু সাইয়িদ লিখেছেন, সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে খুনী খন্দকার মোশতাক বিরাট রকমের বাধার সম্মুখীন হন। সংসদ সদস্যদের বৈঠক বানচাল ও ব্যর্থ হবার পর পার্লামেন্টের কার্যকারিতা রইলো না। মোশতাকের ক্ষমতায় থাকার বৈধতা পেল না। ফলে মোশতাক এবং তৎকালীন মন্ত্রিসভার আর কোনো বৈধ আইনি ক্ষমতা থাকলো না। (অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, তোমার আলোকে রহিব জাগিয়া, পৃষ্ঠা ১৭৫)।

পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন

জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন বহাল রেখেই নির্বাচন ঘোষণা দেন। তখন আবু সাইয়িদের নামে হুলিয়া। তারপরও নেতৃবৃন্দদের নির্দেশে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (মালেক) প্রার্থী হিসেবে পাবনা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করেন। এই আসনে মোট ভোটার ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬১ জন। এখানে বিজয়ী হন বিএনপির মীর্জা আব্দুল আউয়াল। তিনি পান ২১ হাজার ৩৯ ভোট। আবু সাইয়িদ পান ১৯ হাজার ৫৯৫ ভোট। তাঁর অভিযোগ, ‘প্রায় সব ভোটকেন্দ্রে জয়লাভ করার পর মীর্জা আউয়াল নিজ বাড়ির কেন্দ্রের সব ভোট কেটে নেন। ভোট কারচুপির প্রথম তিক্ততা সেখান থেকেই।’

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগ ভেঙে বাকশাল গঠিত হলে তাতে যুক্ত হন আবু সাইয়িদ। তাঁর ভাষায়: আমি দেখলাম আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র। বাকশাল ছিল জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম।

১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবু সাইয়িদ অংশ নেননি।

সংবিধান প্রণেতাগণ বইয়ের প্রথম খণ্ড হাতে অধ্যাক আবু সাইয়িদ, সাথে লেখক ও নুরুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে নাসরিন ইসলাম

১৯৯১ সালের নির্বাচন পাবনা-১ আসন থেকে বাকশালের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি বিএনপি-জামায়ত জোটের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর কাছে হেরে যান। এই নির্বাচনের পরে আওয়ামীলীগ ও বাকশাল একীভূত হলে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবু সাইয়িদ পাবনা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন এবং সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর ভিডিও ফুটেজ (যা ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছিল) পুনরুদ্ধার করেন।

২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেও তিনি মতিউর রহমান নিজামীর কাছে হেরে যান।

২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে চিহ্নিত হলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। তিনি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কিন্তু পাবনা-১ থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনলেও ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শামসুল হক টুকু। ধারণা করা হয়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি গণফোরামে যোগ দেন। তবে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি হেরে যান। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও হেরে যান আবু সাইয়িদ। ২০১৮ এবং ২০২৪—উভয় নির্বাচনেই তাকে কারচুপি করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।

লেখক ও গবেষক আবু সাইয়িদ

১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলে । তিনি এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর অবিনাশি আদর্শ তুলে ধরার জন্য ‘সাপ্তাহিক রাজনীতির’ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদের লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, মেঘের আড়ালে সূর্য, ছোটদের বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব, অঘোষিত যুদ্ধের বু-প্রিন্ট, ব্রুটাল ক্রাইমস্ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ: সিক্রেট ডিপ্লোম্যাসি, মুক্তিযুদ্ধ: উপেক্ষিত গেরিলা, জেনারেল জিয়ার রাজত্ব, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আযম, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক রায়, বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ থ্রেট অব ওয়ার, একাত্তরে বন্দী মুজিব: পাকিস্তানের মৃত্যুযন্ত্রণা, সমাজ বদলে বঙ্গবন্ধুর ব্লু-প্রিন্ট, মুক্তিযুদ্ধের দলিল লণ্ডভণ্ড এবং অতঃপর, মুক্তিযুদ্ধ সত্যের মুখোমুখি ও কোর্ট মার্শাল আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না ইত্যাদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা: কূটনৈতিক যুদ্ধ তাঁর পিএইচডি গ্রন্থ।

পরিবার

মা ও স্ত্রীর সঙ্গে আবু সাইয়িদ

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ১৯৭৪ সালে ঢাকায় দিলরুবা আঙ্গুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর বড় মেয়ে আহৃতা আবু সাইয়িদ কানাডার টরেন্টোতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বড় ছেলে আলি নাজির সাইয়িদ (অনিন্দ্য) কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ব্যাংকার হিসেবে কর্মরত। ছোট ছেলে অনিম সাইয়িদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় লেখাপড়া করে। তিনি বাবার সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top