দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে আলোচনা নিয়ে তাদের অসন্তুষ্টির কথা স্পষ্ট করে বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে ফখরুল যখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তখন তার চোখেমুখে স্পষ্ট ছিল হতাশা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় মির্জা ফখরুল একটি নাতিদীর্ঘ লিখিত বক্তব্যও দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “যে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ও তার সরকারের বক্তব্য ও মতামতে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এর কিছু ব্যতিক্রম আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা আপনাকে সমর্থন জানিয়েছি এবং আপনার ওপরই আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আপনার সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বৈঠকে বিএনপি মূলত যে বার্তাটি দিতে চেয়েছে সেটি হলো, তারা মনে করে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত দেশের বিদ্যমান সংকট কাটবে না। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যে বিশৃঙ্খলা চলছে, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া সেগুলো মোকাবিলা করা কঠিন। তাছাড়া বিএনপি মনে করে, যে ভোটাধিকার থেকে বিগত সরকার দেশের মানুষকে বঞ্চিত রেখেছিল, যত দ্রুত সম্ভব সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকার কি নির্বাচিত?
বক্তব্য দিচ্ছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
এই আলোচনার মধ্যেই সম্প্রতি সামনে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটের প্রশ্নটি। যেহেতু তারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, ফলে তারা কতটুকু করতে পারবে— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত নয়।
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে– প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে ফরিদা আখতারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সমর্থনকারীদের কেউ কেউ জানতে চাইছেন, তাদের সরকার যে ‘অনির্বাচিত’ কে বলেছে?

সালাহউদ্দিন আহমদ
অবশ্য এর পরদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, “উনারা নাকি নির্বাচিত হয়েছেন। কীভাবে? গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উনাদের নির্বাচিত করেছে জনগণ? তাহলে এ দেশে নির্বাচন কমিশন আছে কেন? যদি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়, সেটা অবশ্যই এ দেশের মানুষের কামনা। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকারের বিকল্প তো আপনারা হতে পারেন না। আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত। সেটা প্রতিদিন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, ফরিদা আখতারের এই মন্তব্যের ঠিক আগের দিন তার জীবনসঙ্গী, কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার রাজধানীর মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “কমিউনিটি যখন দাঁড়িয়ে যায়, এলাকা যখন দাঁড়িয়ে যায়, তখনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্মেষ ঘটে। ভোট দিয়ে হয় না, ভোটে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি আসে।”
এর আগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, “নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা। সেই চর্চার জন্য সরকার নির্বাচন করতে হয়। যখন জনগণের ইচ্ছা অভিপ্রায় ঘটে, তারা যখন জানে কী ধরনের রাষ্ট্র তারা কায়েম করতে চায়। রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারটা সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িত।”
নির্বাচন ও জুলাই অভ্যুত্থান
জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে যেসব কারণে; বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের রাস্তায় নামার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল বছরের পর বছর ভোট দিতে না পারা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যেহেতু নির্বাচনি ব্যবস্থাটি ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং সবশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একটি অদ্ভুতরকমের নির্বাচনে আয়োজনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিল— সেহেতু সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। তারা সে ক্ষোভ থেকে রাস্তায় নামেন তাদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য। এখানে আন্দোলন দমনের নামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হত্যা ও গুম একটি বড় কারণ ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভোটাধিকার যে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল— সেটিও মানতে হবে। সুতরাং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি ক্ষমতায় আসে বা ভোটের সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক নেই অথবা জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে— বাক্যগুলোর একাডেমিক মূল্য থাকলেও এর প্রায়োগিক ও বাস্তবিক দিক নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে, এই ধরনের কথাবার্তার মধ্য দিয়ে যাতে অতীতের সরকারের মতোই নির্বাচনি ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে কোনো সরকার দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পথে হাঁটতে না পারে।
নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হলো একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। সুতরাং, দেশের সবচেয়ে ভালো মানুষগুলোও যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন, তারপরেও এটি বলার সুযোগ নেই যে, নির্বাচন প্রয়োজন নেই বা তারা একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছেন মানেই তারা নির্বাচিত এবং তাদের ওপর জনগণের ম্যান্ডেট আছে। কেননা ম্যান্ডেট আছে কি নেই— সেটি জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন এবং অবশ্যই সেটি হতে হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
অতীতে বিভিন্ন নির্বাচন রাতের ভোট, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট, আমি ও ডামির ভোট ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত হয়েছে। ফলে ওইসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের ওপর প্রকৃতপক্ষে কত শতাংশ জনগণের ম্যান্ডেট ছিল, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। সুতরাং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে বলেই অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বাচিত এবং তাদের ওপর জনগণের ম্যান্ডেট আছে— এ কথা বলার সুযোগ কম।
কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন জন বলার চেষ্টা করছেন যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও সম্প্রতি সিলেটে গিয়ে বলেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রচেষ্টা বাড়ানো হয়েছে এবং আরও বাড়বে। রাস্তা থেকে মানুষ বলে যে, আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এই বক্তব্যে সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের বেশ মিল রয়েছে। গত ২৯ মার্চ নিজের ফেইসবুক ওয়ালে তিনি লিখেছিলেন: “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আজীবন থাকবে।”
সেই আলোচনার মধ্যেই এবার এলো এই সরকার ‘নির্বাচিত’ কি ‘অনির্বাচিত’ এবং ভোটের প্রয়োজনীয়তা-অপ্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। বলা হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের মুখে বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত এই সরকার যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, অতএব এই সরকার নির্বাচিত কি না— সেই প্রশ্ন তোলা যৌক্তিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতা গ্রহণ করলেই কি সেই সরকারটি নির্বাচিত, বৈধ বা সাংবিধানিক হয়ে যায়? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি ক্ষমতায় আসে— এই যুক্তিতে কি নির্বাচনি ব্যবস্থাটি বাতিল করে দিতে হবে? ভোট ছাড়াই একটি সরকার অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকবে?
বিশেষ অথবা অনির্বাচিত সরকার
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম অনির্বাচিত সরকার গঠিত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপর। সেনাবাহিনীর সহায়তায় বন্দুকের নলের মুখে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। কিন্তু সেই সরকারটি কি নির্বাচিত ছিল? এরপরে আরও একাধিকবার বন্দুকের নলের মুখের সেনাপ্রধানরা ক্ষমতা দখল করেছেন। কিন্তু তারা শুরুতে নির্বাচিত ছিলেন না। নির্বাচন দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে বৈধ করতে হয়েছে। সংবিধানও সংশোধন করতে হয়েছে।
এরশাদের পতনের পরে প্রথম একটি সাংবিধানিক অনির্বাচিত সরকার গঠিত হয় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ওই সরকারটি গঠিত হলেও সেটিও ছিল অনির্বাচিত। তবে এরপরে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করার পরে সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে, সেগুলো সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে না এলেও তার সাংবিধানিক বৈধতা ছিল। তাদের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ (তিন মাস) ছিল। যদিও ২০০৭ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই মেয়াদ বা সমসয়সীমার বেশি প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিল।
বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত সরকার মানেই যে সেটি নির্বাচিত বা বৈধ নয় সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি বলেছেন, “আইয়ুব খানও (পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক) একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এক-এগারোর যারা কুশীলব, তারাও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতি থাকেনি। আজকে যে পরিস্থিতিকে বিশেষ মনে হচ্ছে তিন মাস পরে যখন সেই পরিস্থিতি বদলে যাবে, তখন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল প্রাইজ বিজয়ী যদি সারা দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত হন, সেটা কি দেশের জন্য কল্যাণকর হবে?”
গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, তখন সংবিধানে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি ছিল না (২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে বাতিল করা হয়েছে)— ফলে ওই সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সরকারটি গঠিত হয়—যে বিধানে বলা হয়েছে, “যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।”
অর্থাৎ, ২০২৪ সালের ৮ অগাস্ট যখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়— তখন যেহেতু সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব ছিল না এবং অভ্যুত্থানের মুখে সরকারের পতন ঘটায় একটি অন্তর্বর্তী বা মধ্যবর্তী সরকার গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন রাষ্ট্রপতি বিষয়টি সুরাহার জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। সুপ্রিম কোর্ট তখন সংবিধানপ্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রের ওই বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ ধরনের সরকার গঠন করা যেতে পারে বলে মতামত দেন।
সংস্কার বনাম নির্বাচন
বিগত সরকার গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে উন্নয়ন শব্দটিকে দাঁড় করিয়ে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, তারা এত এত উন্নয়ন দিয়েছে— অতএব নির্বাচন বা গণতন্ত্র দরকার নেই। সেই একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেও। তারাও এখন সংস্কার শব্দটিকে নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে শুধু নয়, বরং একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার হওয়া সত্ত্বেও তারাও রাজনৈতিক সরকারের মতো বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলছে। তাদের কথাবার্তাও রাজনৈতিক সরকারের মতোই মনে হচ্ছে— যা নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে।
যেমন বুধবারের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়া লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুলও বলেছেন, “বিএনপি মনে করে যে, সব পরিবর্তনই সংস্কার নয়। সংস্কারের উদ্দেশ্য ইতিবাচক ও গঠনমূলক পরিবর্তন। এ ব্যাপারে বিএনপি সব প্রস্তাব নিয়েই যুক্তিগ্রাহ্য আলোচনাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু দল কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থে এবং রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হেয় ও অপ্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় অযথা সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে তাদের ভোটাধিকার তথা রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলকে বিএনপি সমর্থন করে না।”